কাগজের বক্সের ব্যাবসা করে মাসে আয় করুন লাখ টাকা

কাগজের বক্সের ব্যাবসা করে মাসে আয় করুন
কাগজের বক্সের ব্যাবসা করে মাসে আয় করুন

প্যাকেজিং শিল্পের দ্রুত উন্নতিতেকাগজের বাক্সের ব্যাবসার বিপুল চাহিদা ও বাজার তৈরি হয়েছে।যেকোনো পণ্যসামগ্রী বিপণন করতেই এখন কাগজের বাক্সের বিপুল ঢল। তাই এই ব্যবসা এখন খুব লাভজনক।বিশাল পুঁজির পাশাপাশি অল্প পুঁজিতেও কাগজের বাক্সতৈরির ব্যাবসা করা যায়।

কলকাতায় এই ধরনের একচেটিয়া কাজ হয় শিয়ালদহের কাছে সূর্য সেন স্ট্রিটের বৈঠকখানা অঞ্চলে। ফ্যান্সি কার্টুন’এর কর্ণধার প্রবীর পাল জানান, এই ব্যাবসা করা যায় এই দু’ভাবে : ট্রেডিং ও উৎপাদন। তবে বাজার বোঝার জন্য শুরুতে সাপ্লায়ার হিসাবে কাজ শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ। আগ্রহীরা বাইরে থেকে বরাত নিয়ে এসে এই অঞ্চলের বিভিন্ন সংস্থা থেকে কাজ করিয়ে নিতে পারেন। কাজ পিছু কমিশন পাওয়া যায়।

ট্রেডিং করতে চাইলে উৎপাদন সংস্থা থেকে পণ্য কিনে মফঃস্বল ও শহরতলি – এমনকি গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতে পারেন। তবে উৎপাদনমূলক ব্যাবসা করতে চাইলে যেকোনো এক বিশেষ ক্ষেত্র বেছে নেওয়া ভালো। যেমন, ওষুধ / প্রসাধন সামগ্রীর জন্য লাগে কার্টুন বাক্স, গ্রিফট আইটেম প্যাকিজিংয়ের জন্য টপ-বটন, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী মোড়কের জন্য করগোটেড বাক্সের ব্যবহার হয়।

  • কাঁচামাল : বাক্স তৈরির উপাদানের মধ্যে আছে ডুপ্লেক্স বোর্ড কাগজ (ক্রোমো / ম্যাপলিথো)। বোর্ডের শীটগুলি ২০-৩০ ইঞ্চি, ২২-২৮ ইঞ্চি, ২৩-৩৬ ইঞ্চি মাপের হয়। যাবতীয় উপাদান পাবেন বৈঠকখানা আর রাধাবাজার অঞ্চলে।
  • ঘরের মাপ ও মেশিনারি : ছোটখাটো ইউনিট করার জন্য ১০০ বর্গফুটের ঘর হলেই চলবে। মেশিনারির মধ্যে লাগে কাটিং মেশিন, পাঞ্চিং মেশিন। আর প্রিন্টিংয়ের জন্য অফসেট মেশিন / হিট প্রিন্টিং মেশিন আর ল্যামিনেশন মেশিন। প্রথমে শুধুমাত্র কাটিং ও পাঞ্চিং মেশিন নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। ছোটখাটো ইউনিটগুলির মধ্যে ৯০% ব্যবসায়ী অফসেটে ছাপার ও ল্যামিনেশনের কাজ বাইরে থেকে করিয়ে নেন। কারণ অফসেট মেশিন বসানো খুব ব্যয়বহুল। কাটিং আর পাঞ্চিং মেশিন পাবেন হাওড়ার বেলিলিয়াস রোড ও কসবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অঞ্চলে। এছাড়া বড়বাজার, রাজাবাজার ও বৈঠকখানা অঞ্চলে পুরোনো মেশিন কিনতে পাওয়া যায়।
  • তৈরির পদ্ধতি : প্রথমে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্থার পণ্যের আর্ট-ওয়ার্ক তৈরি করা হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা এই লে-আউট করেন। এরপর এই আর্ট ওয়ার্ক ছাপা হয় বোর্ডে। ছাপার পর ল্যামিনেশন করিয়ে অ্যাডহেসিভ দিয়ে পেস্টিং করা হয়। তারপর পাঞ্চিং মেশিনের মাধ্যমে পাঞ্চিং করে কাটিং মেশিনের মাধ্যমে চারদিক কাটিং করা হয়। পণ্য অনুযায়ী বাক্স হয় বিভিন্ন আকার ও আয়তনের।
  • জব কাজ : বৃহৎ উৎপাদনের ঝুঁকি নিতে না চাইলে, জব কাজ করতে পারেন। এই জব কাজ হল বাইরে থেকে কাজের বরাত নিয়ে কোনো ইউনিটের সামগ্রী তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বরাতদাতাকে সরবরাহ করা। এক্ষেত্রে পণ্য বাইরে বিক্রির কোনো ঝামেলা থাকে না। এই ধরনের কাজের জন্য উৎপাদনমূলক ইউনিটগুলির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা দরকার।
  • বিনিয়োগ : অন্তত ২ থেকে ৩ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ছোটো আকারে এই ইউনিট খোলা যায়। উৎপাদনমূলক কাজে গড়ে ১৫% থেকে ২০% আর ট্রেডিং ব্যবসার ১০%-১৫% লাভ রাখা যায়। লাভ নির্ভর করে কাজের গুণগত মান ও পরিমাণের ওপর।
  • বিপণন পদ্ধতি : সংস্থার নামে পরিচয়পত্র ছাপিয়ে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। বড়ো বড়ো কোম্পানি বরাত দেয় টেন্ডারের মাধ্যমে। ফলে কাজ পেতে হলে প্রথমে ছোটো সংস্থার কাছে যেতে হবে। শহরতলি বা, মফঃস্বলে এমনকী গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক, জুতো, জুয়েলারি, গিফট আইটেম সামগ্রীর দোকানে গিয়ে সরাসরি কাজের জন্য দরবার করতে পারেন। তবে আজকের নতুন প্রযুক্তির যুগে এই ব্যবসায় নিজস্ব মৌলিকতা না থাকলে টিকে থাকা মুশকিল। সেজন্য কাজের ক্ষেত্রে চাই বৈচিত্র্য আর সৃজনশীলতা। ব্যবসার – শুরুতে বেশি লাভের চেষ্টা করবেন না। কম মার্জিন রেখে স্থায়ী ক্রেতা ধরার চেষ্টা করতে হবে।
  • শুরুর ক্ষেত্রে পরামর্শ : ব্যাবসা শুরুর আগে এলাকায় সমীক্ষা করে দেখে নিতে হবে, কোন ধরনের মোড়ক বা, বাক্সের চাহিদা কেমন। ব্যবসার উদ্যোগ নিতে হবে সেই অনুসারে। উৎপাদনমূলক ব্যবসা করতে হলে হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে কোনো পরিচিতি কারখানায় গিয়ে বা, বৈঠকখানা অঞ্চলে এই ধরনের কোনো সংস্থায় গিয়ে পর্যবেক্ষক হিসাবে থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেন। কারণ, কাজ জানলে আর পদে পদে ঠকতে হবে না। এছাড়া পেশাদারি ট্রেনিতে নিতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন এই ঠিকানায়: ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্যাকেজিং, ব্লক CP, সেক্টর – V, সল্টলেক সিটি, কলকাতা– ৭০০০৯১। ফোন: (০৩৩) ২৩৬৭০৭৬৩। এখানে ব্যবসার জন্য ইডিপি ট্রেনিং দেওয়া হয় এইসব বিষয়ে (1) করোগেটেড ফাইবার বোর্ড বক্সেস, (২) প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং, (৩) ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং। প্রয়োজনভিত্তিক ট্রেনিং দেওয়া হয় সাধারণত ১ সপ্তাহের। ভরতি শুরু হলেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।