ট্যুরিজম ব্যবসা করে মাসে আয় করুন 30000 হাজার টাকা

ব্যবসা করে মাসে আয় করুন 30000 হাজার টাকা 1

রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক উদ্যোগে বাংলার পর্যটন ক্ষেত্র এবার শিল্পের মর্যাদা পেল। আগ্রহী পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আগ্রহীরা সাহায্য পেতে চাইলে অনলাইন ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের পোর্টালে গিয়ে ‘ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যাটাস’এ আবেদন করতে পারেন। রেজিস্ট্রেশনের লিঙ্ক https:/wbtourismindustrystatus.wbtourismgov.in শীতের মরশুম মানেই বেড়ানো। এই বেড়ানোর ক্ষেত্র ঘিরে ব্যবসার নানা পথ খোলা আছে। এখানে পর্যটন ক্ষেত্রের নানান লাভজনক ক্ষেত্র জানানো হল:

  • ট্রাভেল এজেন্সি ট্রাভেল এজেন্সি আসলে ‘কনসেপ্ট সেলিং’এর ব্যবসা। ট্রাভেল এজেন্সির কাজ টিকিট বুকিং, বিদেশে যাওয়ার জন্য পাশপোর্ট-ভিসার ব্যবস্থা করা, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় ব্যবস্থা করা, প্যাকেজ ট্যুর পরিকল্পনা করা আর বেড়ানোর ব্যবস্থা করা। দক্ষতা অনুসারে ঠিক করে নিতে হবে কী ধরনের পরিষেবা দিতে চান। ট্রাভেল এজেন্সি খুলতে গেলে দরকার পড়ে শুধুমাত্র অফিস ঘর, ফোন আর কম্পিউটার। কম্পিউটারে অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ রাখা দরকার। ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিকিট কাটা আর হোটেল বুকিং করা হয়। শুরুতে ২-৩ জন লোক নিয়ে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার পুঁজিতে এই ব্যবসা শুরু করা যায়। এই ব্যবসায় মুনাফা থাকে ২০%-৩০%।
  • ট্যুর ও ট্রাভেল অপারেটর: কর্মঠ ও পরিশ্রমী ৪-৫ জন উদ্যমী যৌথ উদ্যোগে ট্যুর অপারেটিংয়ের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ট্যুর অপারেটিং আর কিছুই নয়, ভ্রমণার্থীদের পছন্দমতো জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। এই ধরনের ব্যবসার জন্য দরকার উপযুক্ত পরিকাঠামো। পরিকাঠামোয় থাকতে হবে গাড়ি, খাওয়ার ব্যবস্থা,থাকার ব্যবস্থা আর চিকিৎসার ব্যবস্থা। অগ্রিম নিয়ে কাজ হয়। যত ভ্রমণার্থী জোগাড় করতে পারবেন, সেই অনুসারে আয় হবে।
  • টিকেটিং: দূরপাল্লার ট্রেন বা, বিমানের টিকিট কাটার কাজ করে আয় করতে পারেন। বেসরকারি বিমান সংস্থা টিকিট সংরক্ষণের কাজে স্বীকৃত এজেন্ট নেয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওয়েবসাইট দেখে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর ওই সংস্থা থেকে প্রার্থীদের নামে একটি ‘কোড’ নম্বর দেওয়া হবে আর এই কোড নম্বর দেখে টিকিট সংরক্ষণের কাজ করতে হবে। টিকিট পিছু ২% থেকে ৫% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়।
  • হোটেল বা, ট্যুরিস্ট লজ: আর্থিক সঙ্গতি থাকলে হোটেল বা লজ করতে পারেন। আবার কম পুঁজিতে করতে পারেন মোটেল বা ধাবা। ধাবা হল রাস্তার ধারে দর্শনার্থীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা। এছাড়াও পর্যটন কেন্দ্রগুলির ধারে কাছে কোনো হোটেলের এজেন্সি নিয়ে হোটেল বুকিং করে মোট ভাড়ার ১০% থেকে ২০% পর্যন্ত রোজগার করতে পারেন। আজকাল অনেক পর্যটক নিরিবিলিতে ২-৩ দিন কাটানোর গ্রামীণ এলাকা বা, আদিবাসী অঞ্চল খোঁজেন। যার পোশাকি নাম এখন ‘ইকো-ট্যুরিজম’। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া,মুর্শিদাবাদ কিংবা উত্তরবঙ্গের আদিবাসী অঞ্চলে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। এমন জায়গা বাছতে হবে যেখানে যাতায়াতের সুবিধা আছে আর সেইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • পিকনিক স্পট: শীতকাল মানেই পিকনিকের মরশুম। অনেকেই পিকনিকের জন্য গ্রামীণ পরিবেশ খোঁজেন। একটু উদ্যোগ নিলে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন মনোরম স্থানকে পিকনিক কেন্দ্র হিসাবে ভাড়া দিতে পারেন। নিজস্ব জায়গা না থাকলেও ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। আপনার কাজ হবে তদারকির।
  • ট্যুরিস্ট গাইড: নতুন কোনো পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ঘুরে বেরিয়ে সব কিছু দেখানোর সঙ্গী হলেন ট্যুরিস্ট গাইডরা । অজানা অচেনা জায়গার ঐতিহাসিক ঘটনা, কোনো স্থাপত্য শিল্প বা, ইতিহাস ইত্যাদি জানান ট্যুরিস্ট গাইডরা । অতিথি আপ্যায়ন করা ট্যুরিস্ট গাইডদের অন্যতম কর্তব্য। ট্যুরিস্ট গাইড হয় নানা ধরনের। যেমন:
    • জেনারেল গাইড: নিজেদের এলাকায় গাইড করে থাকেন।
    • লিঙ্গুয়িস্টিক্স গাইড ইংরিজি ভাষা ছাড়া যাঁরা অন্যান্য বিদেশি ভাষার পর্যটকদের গাইড করেন।
    • এক্সপার্ট গাইড: বিদেশ থেকে এমন অনেকেই আসেন, যাঁদের উদ্দেশ্য কোনো নির্দিষ্ট জায়গার ওপর গবেষণা করা। এক্ষেত্রে এক্সপার্ট গাইডরা তাঁদের তথ্য জানিয়ে সাহায্য করেন।
    • ইন্ডোর- আউটডোর ট্যুরিস্ট গাইড: কোনো-কোনো ট্যুরিস্ট গাইডরা পছন্দ করেন ইন্ডোরে কাজ করতে। যেমন বিভিন্ন গ্যালারি, মিউজিয়াম আর ঐতিহাসিক মহলের ভেতরে ঘুরে দেখাতে আর সে সম্পর্কে জানান ইণ্ডোর ট্যুরিস্ট গাইডরা। অন্যদিকে, আউটডোর ট্যুরিস্ট গাইডরা শহরের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দর্শনীয় নানান স্থান ঘুরে দেখান।

ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর সংস্থা আর সরকারি পর্যটন নিগমে গাইড নেওয়া হয়। গাইড হওয়ার জন্য পেশাদার ট্রেনিং নিতে হয়। আগে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন দফতর গাইডদের ট্রেনিং দিত। এখন গাইড ট্রেনিং পরিচালনার দায়িত্বে আছে গোয়ালিয়রের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেল ম্যানেজমেন্ট। ট্রেনিং দেওয়ার সময় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যে কোনো শাখার গ্র্যাজুয়টেরা এই ট্রেনিং নেওয়ার জন্য যোগ্য। বিদেশি ভাষা (ফরাসি / জার্মানি / চিনা) জানা থাকলে অগ্রাধিকার পাবেন।

প্রার্থী বাছাই করা হয় লিখিত পরীক্ষা আর ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে। লিখিত পরীক্ষায় থাকে জেনারেল নলেজ ও ইতিহাস। ট্রেনিং দেওয়ার পর নেওয়া হয় পরীক্ষা। পরীক্ষায় সফল হলে পাবেন গাইডের লাইসেন্স (এটা ৩ বছর অন্তর নবীকরণ করতে হয়)। এরপর নাম নথিভুক্ত করতে পারেন আই.টি.ডি.সি., পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যটন দফতর বা, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে। গাইড পদে কাজ কোনো স্থায়ী চাকরি নয়। ফ্রি-ল্যান্সিং কাজ। কাজ পিছু পারিশ্রমিক। সাধারণত ৩৫ জনের দল পিছু ২ জন গাইড নেওয়া হয়। এ রাজ্যে কাজ হয় এই ২ ধরনের: ডোমেস্টিক আর ইন্টারন্যাশনাল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজের জন্য বিদেশি ভাষা জানা আবশ্যিক। একজন ভালো গাইড মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

  • ট্রেনিং কি জরুরি : ট্রাভেল-ট্যুরিজমের কোর্স করা থাকলে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য ট্রেনিং সেন্টারের কথা জানানো হল।
    • ডিগ্রি কোর্স – ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের ডিগ্রি কোর্স পড়ানো হয় এইসব কলেজে মুরলীধর গার্লস কলেজ, মহারানী কাশীশ্বরী কলেজ, ফকির চাঁদ কলেজ, বহরমপুর গার্লস কলেজ, গোবরডাঙ্গা হিন্দু কলেজ, হলদিয়া গভর্ণমেন্ট কলেজ, কৃষ্ণনাথ কলেজ, সুন্দরবন হাজী দশরথ কলেজ। ভরতির জন্য যোগ্যতা দরকার উচ্চমাধ্যমিক পাশ।
    • পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্স পড়ানো হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঠিকানা : রাজবাটি, বর্ধমান। কোর্স : ট্যুরিজম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। ভরতির জন্য যোগ্যতা দরকার অনার্স ডিগ্রি কোর্স পাশ।
    • ডিপ্লোমা কোর্স – রেগুলার মোডে ট্রাভেল ও ট্যুরিজমের ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হয় গোয়ালিয়রের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টে। এছাড়া দূরশিক্ষাক্রমে ট্যুরিজম স্টাডিজের ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হয় ‘ইগনু’তে। এছাড়া রাজ্যের বাইরে ট্রাভেল ও ট্যুরিজমের ডিপ্লোমা, ডিগ্রি ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্স করানো হয় এইসব স্থানে :
      • (ক) ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, গোয়ালিয়র, মধ্যপ্রদেশ।
      • (খ) অ্যামিটি ইনস্টিটিউট অফ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম, নয়ডা, উত্তর প্রদেশ।
      • (গ) কেরালা ইনস্টিটিউট অফ ট্যুরিজম, তিরুবনন্তপুরম।
      • (ঘ) সেন্টার ফর ট্যুরিজম স্টাডিজ, জয়পুর।
      • (ঙ) কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়, কুরুক্ষেত্র।