পাউরুটি তৈরির ব্যবসা করে মাসে আয় করুন 4 থেকে 10 লাখ টাকা

পাউরুটি তৈরির ব্যবসা করে মাসে আয় করুন
পাউরুটি তৈরির ব্যবসা করে মাসে আয় করুন

গ্রামে-শহরে সর্বত্রই পাউরুটির এখন ভালো চাহিদা। আর এর নিশ্চিত বাজার থাকায় উদ্যমী বেকাররা ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে পাউরুটি তৈরির ব্যবসা করতে পারেন। স্বয়ংক্রিয় মেশিন বসিয়ে এই কারখানা করলে প্রতিদিন যে পাউরুটি তৈরি হবে, তার বিক্রির বিশাল বাজার এখনো শহরতলি ও গ্রামে গড়ে ওঠেনি। তাই পাউরুটির পাশাপাশি কেক ও প্যাটিস তৈরি করতে হবে।

  • কাঁচামাল: পাউরুটি তৈরির জন্য দরকার হয় এইসব কাঁচামাল যেমন ময়দা,ডালডা, খাবার লবণ, চিনি, ইস্ট আর বেকিং পাউডার। তবে শুরুতে বেকিং পাউডার না দিলেও চলে। পাউরুটি তৈরিতে ইস্টের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ইস্ট পাউরুটিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেয়। ইস্টের রং সাদা বা, হাল্কা বাদামি। অধিকাংশ বেকারিতে মাখনের বদলে ডালডা দেওয়া হয়। কারণ মাখন ব্যবহারে পড়তায় আসে না।
  • কোথায় পাবেন: ওপরের যাবতীয় উপাদান পাবেন স্থানীয় মুদিখানার দোকানে। ইস্ট পাইকারি দরে পাবেন এই ঠিকানায়: (১) লাহা অ্যান্ড লাহা কোম্পানি, ২২, রবীন্দ্র সরণী, কলকাতা-৭০০০০১। এছাড়াও পাবেন কলকাতার ক্যানিং স্ট্রিটের (বড়বাজার) বিভিন্ন দোকানে।
  • যন্ত্রপাতি: দরকারি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের মধ্যে আছে ৷ (১) ভঁাটি বা, বিদ্যুৎচালিত উনুন, (২) ময়দা মাখার মিক্সার মেশিন, (৩) স্লাইসড পাউরুটির জন্য স্লাইসিং মেশিন, (৪) ময়দা শিফটার মেশিন, (৫) চিনি গুঁড়ো করার প্রাইন্ডিং মেশিন, (৬) ব্রেড মোল্ডার মেশিন, (৭) কেক করতে চাইলে কেক তৈরির উপযোগী বিদ্যুৎচালিত ক্রিম ও ডিম মিক্সার মেশিন, (৮) বিভিন্ন পাউন্ডের মাপের মোল্ডার বা, ছাঁচ, (৯) ভাটিতে পাউরুটি ঢোকানোর জন্য নানান মাপের ট্রে।
  • কোথায় কী পাবেন: যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও ভাঁটি পাবেন শ্যামবাজারের আর.জি. কর রোডের বিভিন্ন দোকানে। এছাড়াও পাবেন এই ঠিকানায় ওরিয়েন্টাল মেশিনারি, ২৫, আর.এন. মুখার্জী রোড, কলকাতা- ১। ছাঁচ বা, মোল্ড পাবেন গণেশচন্দ্র অ্যাভেনিউ ও দমদমের কৃষ্ণপুর লেনের নানান দোকানে।
  • ভাঁটি: পাউরুটি সেঁকার জন্য ভাঁটি তৈরি করা হয় বিশেষ পদ্ধতিতে। গ্রাম বা, আধা শহরে পাউরুটি, কেক ও প্যাটিস তৈরিতে ছোট ভঁাঁটাই যথেষ্ট। এর মাপ হল ৮ ফুট × ১০ ফুট। তাপ ধরে রাখার উপযুক্ত ঝামা ইট দিয়ে তৈরি এটা আসলে বন্ধ কুঠুরি। দু’দিকে ঢাল থাকে। ছাদও তৈরি হয় তাপ ধরে রাখার ঝামা ইটে। মাটি থেকে ৪ ফুট উঁচু একটি মাটির বেদির ওপর তৈরি হয় কুঠুরির মেঝে। কুঠুরির উচ্চতা হয় ৫ ফুট। সামনের দিকে ঘুলঘুলির মতো ফাঁক দিয়ে পাউরুটি, কেক, প্যাটিস ট্রেতে করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আর এইসব খাদ্যপণ্য তৈরি হলে বের করা হয়। ঘুলঘুলির মতো ফাঁকা জায়গা টিন বা, অ্যাসবেস্টরের পাল্লা দিয়ে বন্ধ করা যায়। কুঠুরির একটু দূরে পাউরুটি ঢুকিয়ে দেওয়া আর টেনে আনার জন্য তক্তা লাগানো লম্বা লাঠি ব্যবহার করা হয়। কুঠুরিতে রুটি শেঁকার উপযোগী তাপের জন্য কাঠ ঢেলে দেওয়া হয়। একবার কুঠুরিকে গরম করতে পারলে ৭ দিন গরম থাকে। কুঠুরির ভেতরের ধোঁয়া বাইরে বের করার জন্য ছাদের ওপরে চিমনি বসাতে হয়।
  • পাউরুটি তৈরির পদ্ধতি: পাউরুটি তৈরির জন্য এইসব উপাদান মেশাতে হবে এইসব অনুপাতে : ময়দা (২৫ কেজি), ডালডা (২০০ গ্রাম), লবণ (৪৫০ গ্রাম), জল (১৩.৫ লিটার), ইস্ট (২৫০ গ্রাম), চিনি ( ৫০০ গ্রাম)। প্রথমে গ্রাইন্ডিং মেশিনে চিনি গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর ওপরের ওইসব উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে মাখার পর অন্তত ৩-৪ ঘন্টা ফেলে রাখতে হবে। সময় কমাতে চাইলে ইস্টের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। এবার মাখা ময়দায় গেঁজা তুলতে হলে মাখা ময়দাকে গোল বলের মতো করে নিয়ে মসৃণ আর চকচকে পাত্রে ভরে নিতে হবে, যাতে ওই ময়দার বল শুকিয়ে ফেটে না যায়। ময়দাকে গাঁজানোর সময় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখতে হবে। শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে গরম করতে হতে পারে। ময়দা গাঁজানোর সময় তার মধ্যে নরমভাব কেমন আছে,তা জানতে আঙুল ঢুকিয়ে দেখতে পারেন। মাখা ময়দায় যাতে গ্যাস-না জমে, সেজন্য গাঁজা তোলার পর পাঞ্চ করতে হয়। ময়দা মাখা, গাঁজা তোলার পর নরম ময়দার এমন মাপের লেচি করতে হবে, যাতে লেচি ছাঁচের শুধুমাত্র অর্ধেক জায়গা জুড়ে থাকে। এবার ছাঁচে বা,মোল্ডে লেচি ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ গাঁজা বা, রস বেরোলে মুছে দিন। রুটির মাপ অনুযায়ী ছাঁচও হয় বিভিন্ন মাপের। যেমন, ১০০ গ্রাম ২০০ গ্রাম ও ৪০০ গ্রাম। গোলরুটির জন্য লাগে গোলাকার ছাঁচ। সেঁকার জন্য তাপমাত্রা লাগে ১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা, ৩৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। কিছুদিন সেঁকার পর এই তাপমাত্রা সম্পর্কে আন্দাজ এসে যায়। তবে তাপ ওঠাতে হলে গরম ভাটিতে কাঠ ওঁজতে পারেন আর তাপ কমাতে চাইলে কলাগাছের কান্ড ঢোকাতে পারেন। কোয়ার্টার অর্থাৎ ১০০ গ্রাম ওজনের পাউরুটি সেঁকে খাওয়ার উপযুক্ত হতে সময় লাগে ৫-৬ মিনিট। ২০০ গ্রাম ও ৪০০ গ্রাম ওজনের পাউরুটি সেঁকতে সময় লাগে ১০-১৫ মিনিট। যখন পাউরুটি ছাঁচের মধ্যে কুঁচকে যাবে ও হাস্তা কালচে লাল বা, বাদামি হবে তখন বুঝতে হবে পাউরুটি তৈরি হয়েছে। পাউরুটি তৈরি হয়ে গেলে ছাঁচ ভরতি ট্রে নিয়ে এসে ঠাণ্ডা করতে হবে। রুটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে স্লাই সিং মেশিনে স্লাইস করে কেটে প্যাকেটে ভরতে হবে। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে হলে কিন্তু প্যাকেজিং ভালো হওয়া চাই। বেশি লাভ রাখতে চাইলে পাউরুটির পাশাপাশি কেক ও বিস্কুট তৈরি করতে হবে।
  • কোথায় টাকা পাবেন: বেকার ছেলেমেয়েরা পাউরুটি তৈরির বেকারি করতে চাইলে ‘প্রধানমন্ত্রী কর্মসৃজন প্রকল্প’ বা, ‘বিবেকানন্দ বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প’ থেকে ঋণ পেতে পারেন।
  • ট্রেনিং: পাউরুটি তৈরির পদ্ধতি ও প্রকরণ জানতে পরিচিত কোনো বেকারিতে গিয়ে কথা বলতে পারেন। এছাড়া উদ্যমীরা এ ব্যাপারে পরামর্শ পেতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি বিভাগের EDP সেলে যোগাযোগ করতে পারেন। প্রকল্প তৈরি ও আর্থিক অনুদান ইত্যাদি জানতে হলে যোগাযোগ করতে হবে সল্ট লেকের ময়ূখ ভবনে রাজ্য সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরে।