ধূপকাঠির ব্যবসা করে মাসে ৮৯৯০০ টাকা আয় করুন

ধূপকাঠির ব্যবসা করে মাসে আয় করুন
ধূপকাঠির ব্যবসা করে মাসে আয় করুন

ধূপকাঠির ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। আর কম পুঁজিতেই শুরু করা সম্ভব। ধীরে ধীরে অনেক বড়ো ব্যবসা গড়ে তোলা সহজ। কিন্তু ধূপকাঠি তৈরির ব্যবসা কেন?
(১) ধূপকাঠির চাহিদা সর্বত্র `= শুট্টু’ত্র দেশনী, ‘পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেও। চাহিদাও শেষ হওয়ার নয়। (২) স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়। পদ্ধতিও সহজ, মুনাফাও ভালো। ক্রমশ ব্যবসা বড়ো করার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। (৩) পবিত্র জিনিস উৎপাদনে জড়িত থাকার সুযোগ।

  • কী কী কাঁচামাল লাগবে: (১) চারকোল পাউডার (Charcoal Powder), (২) ‘শ’ – ডাই (Saw Dust), (৩) সুগন্ধী পাউডার (Incense Powder), (৪) জিগ পাউডার (Jigat Powder), (৫) গুয়ার গাম (Guar Gum) – 3 (৬) বাঁশের কাঠি (Bambop Sticks), এছাড়া আলাদা Dipping এ (৭) DEP oil : ৩ লিটার ও (৮) Perfume-১.২৫ মিলিলিটার ) (৯) পি. পি. পাউট (P. P. Pouch) (১০) কাগজের বাক্স (Paper Box) কীভাবে ধূপকাঠি তৈরি করা যায় – (১) প্রথম পদ্ধতি। কোনো মেশিন ছাড়া ড্রাই ধুপকাঠিটিতে সুগন্ধী লাগিয়ে (Dipping করে) খুব সহজে কম টাকা বিনিয়োগে বেশ লাভজনক ব্যবসা। শুরুতে এভাবেই ব্যবসা করা যেতে পারে।
  • কী কী কাঁচামাল দরকার : (১) ড্রাই ধূপকাঠি (সুগন্ধী ছাড়া), (২) সুগন্ধী (তৈরি করা-read), (৩)পি.পি. পাউচ, (৪) কাগজের বাক্স, (৫) হিট সিলিং
  • তৈরির পদ্ধতি : সুগন্ধী ছাড়া ড্রাই ধূপকাঠি (মশলা-সহ) কিনে তৈরি সুগন্ধীতে ডুবিয়ে – পরে শুকিয়ে নিতে হবে। পি.পি. পাউচে ভরে হিট সিলিং মেশিনে মুখবন্ধ করে কাগজের বাক্সে ভরে নিতে হবে। পরে মার্কেটিং করা। লাভ কেমন : ২০ কেজি তৈরিতে – (১) ড্রাই ধূপকাঠি ২০ কেজি (প্রতি কেজি ৯০ টাকা) – ১,৮০০ টাকা। (২) সুগন্ধী ১ কেজি (প্রতি কেজি ৮০০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকা) – ১,২০০ টাকা। (৩) পি.পি. পাউচ ২০০টি – ১০০ টাকা। (৪) কাগজের বাক্স ২০০টি – ৩০০ টাকা। (৫) হিট সিলিং মেশিন (একবার) ১টি – ২,০০০ টাকা।
  • ধূপকাঠি তৈরিতে খরচ : প্রতি কেজিতে ২৭২ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ ১০০ গ্রামের প্যাকেটে খরচ ২৭.২৫ টাকা বা ২৮ টাকা (প্রায়)। পাইকারি দরে অতি সহজে লাভ (১০০ গ্রামে) ১৩ (৪১ – ২৮) টাকা। তাহলে পাইকারিতে বিক্রি করলে ১০০ গ্রামে লাভ ১৩ টাকা। ২০ কেজিতে পাইকারিতে লাভ ৩,৬০০ টাকা, যেখানে বিনিয়োগ ৫,০০০ টাকা। ঠিকমতোভাবে ব্যবসায় ৩০,০০০ টাকা থেকে ৩৫,০০০ টাকা প্রতি মাসে লাভ করা যেতে পারে।
  • ধূপকাঠি তৈরির অন্যান্য পদ্ধতি:
    • দ্বিতীয় পদ্ধতি : ধূপকাঠির মণ্ড (mix paste), যা বাজারে ‘Premix হিসাবেও পাওয়া যায়। বাঁশের কাঠিতে হাতে রোল করে শুকিয়ে পরে সুগন্ধীতে ডিপিং করেও শুকিয়ে তৈরি করা হয় কোনো মেশিন ছাড়াই।
    • তৃতীয় পদ্ধতি : সেমি-অটোমেটিক, কিছুটা হাতে কিছুটা মেশিন ব্যবহার করে। মেশিনের নাম ‘সিঙ্গল পেডাল’ বা ‘ডবল পেডাল টাইপ’। ওপর থেকে ধূপকাঠির মণ্ড দেওয়া হয় ‘ইপার’-এ। বসে পেডালিং করা হয়, ডানদিক থেকে কাঠি ঢোকানো হয়। বামদিকে কাঠি মশলা মিশ্রিত হয়ে জমা হতে থাকে। পরে সুগন্ধী মিশিয়ে শুকানো হয়। প্রতি মেশিনে ১ জন লোক দরকার হয়।
    • চতুর্থ পদ্ধতি : সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়, অর্থাৎ পুরোপুরি মেশিনের সাহায্যে, বা অত্যন্ত তাড়াতাড়ি তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে ড্রায়ার মেশিনও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতি অত্যন্ত লাভজনক।
  • ধূপকাঠির মণ্ড বা Mix Paste এর ফর্মুলা: যদিও ফর্মুলা বিভিন্ন কোম্পানির আলাদা আলাদা ও অত্যন্ত গোপনীয়, তা সত্ত্বেও মোটামুটিভাবে এই রকম।
    • (১) চারকোল গুঁড়ো (Charcoal Powder) ৬৫০ গ্রাম।
    • (২) উঙ গুঁড়ো (Wood Powder)-৩৫০ গ্রাম।
    • (৩) জিগত গুঁড়ো (Jigat Powder)- ৫০ গ্রাম।
    • (৪) গুয়ার গ্রাম (Guar Gum) -৪০ গ্রাম।
    • (৫) বাঁশ কাঠি (Bamboo Sticks) ৩৫০ গ্রাম। বাজারে অবশ্য ‘Premix’ হিসাবেও পাওয়া যায়। তার সঙ্গে জল মিশিয়ে মণ্ড বা Mix বানানো হয়।
  • কাচামাল কোথায় পাবেন: ধূপকাঠি তৈরির সব জিনিসপত্র বা কঁাঁচামাল কলকাতার বড়বাজার ও পোস্তায় পাওয়া যায়। কয়েকটি বিশিষ্ট দোকানের নাম Maa Vaishno Centre (A House of all Agarbatti Raw materials & Perfumes), ৬৫ রতন সরকার গার্ডেন স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০৭। ফোন: ৯০০৮০৮৪৪৪৭। এছাড়া Deb Shakti Agarbattic Enterprise, দক্ষিণ গোলবাগান, নিমতা, কলকাতা ৭০০০৪৯। ফোন: ৭২৭৮২৩১২০৯।
  • কী কী লাইসেন্স দরকার : ব্যবসার শুরুতে অর্থাৎ অল্প বিনিয়োগে শুধু ট্রেড লাইসেন্সই যথেষ্ট। তবে ব্যবসা বাড়লে দরকার ।
    • (১) MSME (Micro Small Medium Enterprise).
    • (২) কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন,
    • (৩) জিএসটি,
    • (৪) ‘নো পলিউশন সার্টিফিকেট’।
  • কয়েকটি প্রয়োজনীয় ও জরুরি তথ্য:
    • (১) ১ কেজি সুগন্ধী কাঠি থাকে – ১১০০ থেকে ১৪০০ কাঠি।
    • (২) ধূপকাঠির সাইজ বা লম্বা – ৮ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি
  • উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী মেশিনের দাম :
    • ১-৫ কেজি প্রতি ঘণ্টায় – ৩০,০০০ টাকা থেকে ১,০০,০০০ টাকা।
    • ১০-১৪ কেজি প্রতি ঘণ্টায় – ৬৭০০০ টকা থেকে ১৫৫০০০ টাকা।
    • ১৫-২০ কেজি প্রতি ঘণ্টায় – ৭৫০০০ টাকা থেকে ১৮৫০০০ টাকা।
    • ২০-২৫ কেজি প্রতি ঘণ্টায় ৮০,০০০ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা।
  • মেশিন ও সাজসরঞ্জাম কোথায় পাবেন: বিভিন্ন রকমে বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষমতার আগরবাতি বা ধূপকাঠি তৈরির মেশিন কিনতে পাওয়া যায় কলকাতা- সহ সারা ভারত জুড়ে। তবে মেশিন খারাপ হলে তাড়াতাড়ি মেশিন সারাতে কাছের জায়গা থেকেই খোঁজখবর নিয়ে ভালো মেশিন কেনা উচিত।

এ ব্যাপারে কয়েকটি নামি ওয়েবসাইট ঘাঁটা যেতে পারে –

  1. indiamart.com
  2. tradeindia.com
  3. justdial.com
  4. exportersindia.com
  5. jdmart.com

ভারতে প্রথম ১০ বিখ্যাত ধূপকাঠি কোম্পানি বা ব্র্যান্ড হল – (১) সাইকেল, (২) মোক্ষ, (৩) মঙ্গল দীপ, (৪) জেড ব্ল্যাক, (৫) হেম, (৬) পতঞ্জলি, (৭) পুজাদীপ, (৮) হরি দর্শন, (৯) কল্পনা, (১০) নন্দী ধূপকাঠি

DEP OII কী? ধূপকাঠি তৈরিতে কী কাজে লাগে?

D.E.P এর পুরো শব্দ হল Diethyl Phthalate, যা এক প্রকার তেল। এর সঙ্গে সুগন্ধী মিশিয়ে ঢিপিং বা ডুবানো হয় পরে শুকানো হয়। যখন রেডিমেড সুগন্ধী ব্যবহার করা হয় না তখন ১ লিটার DEP তেলে ১,২৫ মিলিলিটার সুগন্ধী মিশিয়ে ধূপকাঠি ডোবানো হয়ে থাকে।

  • মশা মারার ধূপকাঠির ব্যবসা : এটিও একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। তৈরির পদ্ধতি প্রায় একই, তবে ফর্মুলেশন আলাদা, কাঠির সাইজও আলাদা। সাধারণত ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়।
  • ফর্মুলা: (১) ১ কেজি ময়দা লাকরি পাউডার (২) ১ কেজি বাবুল বাক পাউডার (৩) ৫০০ গ্রাম নাগারমোথা পাউডার (৪) ৫০ গ্রাম পাইরেথ্রাম ফ্লাওয়ার পাউডার (৫) ৫০ গ্রাম সেডারউড তেল (৬) ১০ গ্রাম টাগেটিস তেল। এইসব উপকরণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হয়। মশার জন্য আলাদাভাবে RTD তেলও ব্যবহার করা যায়। তৈরি কাঠিকে সোজাসুজি ডুবিয়ে দিতে হয়।

ধূপকাঠির ব্যবসা বেশ লাভজনক। বিনিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ালে লাভও যথেষ্ট বাড়বে। তবে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে ব্যবসা বাড়ানো উচিত। এতে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থানও হয়।