জীবাণু কি ও জীবাণু বাহিত রোগ কাকে বলে

জীবাণু কি

জীবাণু বলতে সাধারিত অত্যন্ত ছোট জীবনপ্রাণী বোঝায়, যা মূলত অমৃতবাণু বা মাইক্রোবিওটা (Microbe) হিসেবে পরিচিত। এই জীবাণুগুলি বহুত্বপূর্ণ কাজ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়, যেমন পৃথিবীতে বায়ু, জল, মাটি, শক্তিশালী পদার্থের প্রসারণে, পোষণে, ও বিভিন্ন প্রকারের জীবনকে প্রভাবিত করতে।

জীবাণু বিভিন্ন প্রজাতির হতে পারে, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, প্রোটোজোয়া, এবং অন্যান্য সমরূপ জীবাণুগুলি। তারা অসংখ্য প্রজাতির হতে পারে এবং একে অপরের সাথে সংবাদ করতে সক্ষম থাকতে পারে।

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, পরিবারের উত্থান, এবং পৃথিবীর বায়ু, জল, ও মাটির স্বাস্থ্যের দিকে দেখলে জীবাণুগুলির গুরুত্ব অসাধারণ। কিছু জীবাণু রোগ তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে, এবং অন্যতমে তারা প্রোবায়োটিকস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে যা আমাদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

জীবাণু কি ও জীবাণু বাহিত রোগ কাকে বলে
জীবাণু কি ও জীবাণু বাহিত রোগ কাকে বলে

জীবাণু শব্দের অর্থ কি

“জীবাণু” শব্দের বাংলা অর্থ হলো “বহুত্বপূর্ণ সুক্ষ্ম জীবজন্তু” বা “অত্যন্ত ছোট জীবনপ্রাণী”। এই শব্দটি মূলত জীবাণুগুলির বিশ্বাসযোগ্য বা মাইক্রোবিওটা (Microbe) অবস্তান করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা বহুত্বপূর্ণ পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সহায়ক।

জীবাণু বিদ্যার জনক কে

জীবাণু বিদ্যা বা মাইক্রোবায়োলজি বিদ্যা একটি বিজ্ঞান শাখা, যা অত্যন্ত ছোট জীবাণুগুলির অধ্যয়ন ও তাদের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে মৌলিক ভূমিকা রাখে। এই শাখার জনক বিজ্ঞানী অ্যানটোনি ভান লীয়ুয়েনহোক (Antony van Leeuwenhoek) ছিলেন।

অ্যানটোনি লীয়ুয়েনহোক ছিলেন হল্যান্ডের একজন ডাচ মাইক্রোস্কোপ উদ্ভাবক, যার জনক হিসেবে তাকে মাইক্রোবায়োলজি বিদ্যা প্রবর্তনকারী হিসেবে মানা হয়। তার কাজের মাধ্যমে তিনি ১৭শ শতাব্দীর মাঝামাঝি জীবাণুগুলির উপস্থিতি সন্ধান করেন এবং এগুলির মাধ্যমে অত্যন্ত ছোট জীবনপ্রাণীর বিশ্ব জানা গিয়েছিলেন।

এরপরে, জীবাণু বিদ্যা বিকাশ করে অনেকগুলি বৈজ্ঞানিক শাখা, যেমন ব্যাকটেরিয়োলজি, ভাইরালজি, ফাঙ্গালজি, প্রোটিস্টলজি, ইমিউনোলজি, জেনেটিক্স, এবং একোলজি ইত্যাদি।

জীবাণু কত প্রকার ও কি কি

জীবাণু বিশ্বে অনেক প্রকারের ও বিভিন্ন ধরণের থাকতে পারে। তাদের বিভাজনের জন্য বিভিন্ন পরিমাণ বা বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা হতে পারে। মোটামুটি, জীবাণুগুলি দুটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত হয়:

  1. প্রোকারিয়োটা (Prokaryota): এই শ্রেণিতে জীবাণুর সেলের নিচে কোন আণবিক জোড়াবদ্ধ নয় এবং একটি সিটোপ্লাসমও ছাড়াই থাকে। এটি প্রোকারিয়োট কিংডমের অংশ, যা ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া গ্রুপগুলির মধ্যে থাকে।
  2. ইউকারিয়োটা (Eukaryota): এই শ্রেণিতে জীবাণুর সেলের নিচে একটি আণবিক জোড়াবদ্ধ থাকে এবং সিটোপ্লাসম ও অন্যান্য জোড়াবদ্ধ অংশগুলি আছে। এই শ্রেণিতে অনেক জীবাণু যা একক-সেল এবং বহু-সেল সংগঠিত তাদের দেহ বা থাকতে পারে, তা সমৃদ্ধ রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে।

এছাড়াও, জীবাণুগুলি বিভিন্ন জীবাণুগুলির মধ্যে প্রজাতিগুলির আধারেও বিভাজন করা হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, এবং প্রোটিস্টা ইত্যাদি প্রধান জীবাণু প্রজাতির উদাহরণ। এই প্রজাতিগুলির মধ্যে প্রতিটির বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা ভিন্ন থাকতে পারে।

জীবাণু কোথায় দেখা যায়

জীবাণু সাধারণভাবে অদৃশ্য হওয়ার জন্য এতেক ছোট হওয়া থাকে যে তা নকল বা অবৈদ্যুত মাইক্রোস্কোপে দেখা যায় না। অনেক জীবাণু নকল মাইক্রোস্কোপ দিয়েই দেখা যায়, যেগুলি হতে পারে বক্টেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, অথবা অন্য একক-সেল জীবাণু।

সবচেয়ে সাধারিত রূপে, জীবাণু প্রকৃতির বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে, যেমন:

  • পৃথিবীর মাটি: বৃহত্তরাংশ জীবাণুগুলি ভূমিতে থাকতে পারে, মৃদুভূত স্থানে বা জীবাণুবাণিজ্ঞানে একটি উদ্যানের জলমাধ্যমে অথবা অন্য কোনও স্থানে।
  • জল: অনেক জীবাণু জলে থাকতে পারে, যাদের মধ্যে কিছু হলো অমৃতবাণু বা মাইক্রোবায়োটা যা জলবায়ুতে থাকতে সক্ষম।
  • বাতাস: কিছু জীবাণু বা তাদের শোধ মাধ্যমে বাতাসে পাওয়া যায়, সর্দকোন্ডি বা মৃত্যুতে থাকতে সক্ষম হতে পারে।
  • মানব শরীর: মানব শরীরে অনেক জীবাণু থাকতে পারে, যেগুলি অনেক প্রকারের রোগ এবং অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে অনেক জীবাণু মানব শরীরের সাথে সুস্থতা প্রদান করতে সক্ষম ও প্রয়োজন।

জীবাণু অনেক স্থানে থাকতে পারে এবং তাদের দেখা সম্ভব মূলত বিশেষ উপকরণের সাহায্যে যা হলো নকল মাইক্রোস্কোপ।

জীবাণুবাহিত রোগ কাকে বলে

জীবাণুবাহিত রোগ হলো এমন রোগ যা জীবাণুর কারণে হয়ে থাকে বা জীবাণুর প্রতি একজনের মধ্যে একটি বা একাধিক জীবাণুর অনুপ্রাণিত রোগ। এই রোগের উৎপন্ন হওয়ার পেশাদার পথ হতে পারে বা কোনও নিকৃষ্ট পরিস্থিতিতে জীবাণুগুলির সংগঠন ও বৃদ্ধি হতে পারে।

জীবাণুবাহিত রোগের উদাহারণগুলি হতে পারে:

  • ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন (Bacterial Infections): এই ধরনের ইনফেকশন ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর কারণে হয়। উদাহারণস্বরূপ, স্ট্রেপটোককাস, স্টাফিলোককাস, ও সালমনেলা এই ধরনের জীবাণুবাহিত রোগের উদাহারণ।
  • ভাইরাল ইনফেকশন (Viral Infections): ভাইরাস একটি ধরনের জীবাণু হিসেবে গণ্য হয়, এবং এই ধরনের ইনফেকশন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের কারণে হতে পারে, যেমন ইনফলুয়েঞ্জা, হিভি, হাইভিভি, এইচআআইড্স (HIV) ইত্যাদি।
  • ফাঙ্গাল ইনফেকশন (Fungal Infections): ফাঙ্গাস একে অপরের সাথে একত্রিত হতে পারে এবং ফাঙ্গাসের কারণে অনেক ধরণের রোগ হতে পারে, যেমন ক্যান্ডিডিয়াসিস, এসপার্জিলোসিস, রিঙওর্ম ইত্যাদি।

জীবাণুবাহিত রোগের বিদ্যমানি বা শঙ্কা থাকলে, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ করতে একজন চিকিৎসকে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।

জীবাণু নাশকের নাম

জীবাণু নাশকের নাম বিভিন্ন ধরণের বা বিভিন্ন জীবাণুবিশেষের উপর নির্ভর করে। জীবাণু নাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পরিচিত কিছু উদাহারণ নিম্নে দেওয়া হল:

  • পেনিসিলিন (Penicillin): পেনিসিলিন হলো একটি প্রথম জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে ব্যবহৃত হয়।
  • টেট্রাসাইক্লিন (Tetracycline): টেট্রাসাইক্লিন হলো একটি প্রস্তুতি জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে ব্যবহৃত হয়।
  • সিফিক্সিম (Cefixime): সিফিক্সিম হলো একটি সেফালোস্পোরিন জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে ব্যবহৃত হয়।
  • আমিনোগ্লাইকোসাইড (Aminoglycoside): একটি ক্লাস অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে ব্যবহৃত হয়, উদাহারণস্বরূপ, জেন্টামাইসিন।

এই সব অ্যান্টিবায়োটিকগুলি বিভিন্ন ধরণের জীবাণুগুলির বিকল্প ভংগ করতে সাহায্য করতে পারে এবং ইনফেকশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময়ে কারেন্ট চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই প্রাপ্ত করতে হবে, এবং ডোজ এবং সঠিক সময়ে প্রবাহ করার জন্য নির্দিষ্ট পরামর্শ মানতে হবে।

জীবাণু কিভাবে বিশ্বকে প্রভাবিত করে

জীবাণুরা বিশ্বকে বিভিন্ন পদার্থে ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করতে পারে। এটা তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি এবং তাদের কার্যকারিতা নির্ভর করে।

  • বায়ু, জল, মাটির সংরক্ষণ: ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুরা বায়ু, জল, এবং মাটির স্বাস্থ্য এবং সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের মাধ্যমে পরিষ্কার জল ও মাটি তৈরি হতে সহায়ক হতে পারে এবং জীবাণুর প্রসারে সীমানার মধ্যে রাখতে পারে।
  • পোষণে ও সাধারিত শারীরিক স্বাস্থ্যে: কিছু জীবাণু পোষণে, খাদ্যতৈরি এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কোনও প্রজাতি বা ধরণের জীবাণুর অভাব বা অধিক হতে পারে পোষণে ও শারীরিক স্বাস্থ্যে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • জীবাণুর অবস্থান ও প্রভাবস্থলের মাধ্যমে: কিছু জীবাণু পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে অবস্থিত থাকতে পারে এবং তাদের প্রভাবস্থলের মাধ্যমে পৃথিবীকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন আবহাওয়ায়, মধুময় আবহাওয়ায়, সোলো ভাবে ও অন্যান্য রূপে।
  • জীবাণুবিশেষের কারণে রোগ: কিছু জীবাণু মানুষের বা অন্যান্য জীবাণুবিশেষের কারণে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগের উদাহারণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ভাইরাস ইনফেকশন, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি।

এই প্রভাবগুলি বিভিন্ন ধরণের জীবাণুগুলির কারণে ঘটে এবং তাদের প্রভাবে পৃথিবী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Tags: