দর্শন শাস্ত্র কী – দর্শন নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়

দর্শন শাস্ত্র হলো মানব চিন্তা, জ্ঞান এবং বিশ্বের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিরীক্ষণ করার একটি বিশাল শাখা। দর্শন শব্দটি সাংস্কৃতিক অর্থে দেখা যায়, যা “দর্শন” বা “দৃশ্য” মানে করে, এবং “শাস্ত্র” শব্দটি বিশেষ জ্ঞান বা তত্ত্ব নির্দেশ করে। অর্থাৎ, দর্শন শাস্ত্র মানব বিচারের, জ্ঞানের এবং বিশ্বের স্বরূপ এবং তত্ত্বের প্রশাসন নির্দেশ করে।

দর্শন শাস্ত্র মূলতঃ একটি বিশেষ ধারাবাহিক প্রণালী, মানব চিন্তার বিভিন্ন বিষয়ে ভিত্তি করে তত্ত্ব, তাত্ত্বিক চিন্তা, প্রকৃতি, মানব বিকাশ, জীবনের উদ্দেশ্য, নীতি, ধর্ম, সমাজ এবং সামাজিক ন্যায় ইত্যাদি সম্পর্কে পরিশীলনা করে। এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার সময়ে বিশেষভাবে তারতম্য, বৈচিত্র্য, এবং মূল প্রশ্নগুলি নিয়ে চিন্তা করা হয়।

দর্শন শাস্ত্র বিভিন্ন ধারাবাহিক প্রণালীতে বিভক্ত হয়ে থাকতে পারে, যেমন পুরানো ভারতীয় দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, সাংখ্যদর্শন, যোগদর্শন, মীমাংসা, বেদান্ত, নৈতিকতা, বৌদ্ধদর্শন, জৈনদর্শন, চার্বাকদর্শন ইত্যাদি। প্রত্যেকটি প্রণালী নিজস্ব তত্ত্ব, মৌলিক প্রশ্ন এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তা করে।

দর্শন শাস্ত্র বিশ্বের স্বরূপ, মানব বুদ্ধিতে সম্প্রেষণ, বিচার, সত্য এবং বুদ্ধির নির্মূলন সম্পর্কে আলোচনা করে এবং মানব বিচারের গভীরতা চিন্তার দিকে নিয়ে যায়।

দর্শন কয় প্রকার

দর্শন বা দার্শনিক চিন্তা বিশ্বের স্বরূপ, মানব বিচার, জ্ঞান, নীতি, ধর্ম ইত্যাদি নিরূপণ করার প্রক্রিয়ার একটি উপাধি বা শাস্ত্র হিসেবে বিভিন্ন প্রকারে পরিচিত আছে। প্রধানভাবে, দর্শন বা দার্শনিক চিন্তা প্রকারে একটি বিশাল শ্রেণি হিসেবে বিভক্ত হতে পারে, যেমন:

  1. মেটাফিজিক্স: এই দর্শনে বিশ্লেষণ হয় মৌলিক বিশ্বের স্বরূপ, সাত্তা, কারণ ও ফল, বিশ্বের উত্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে।
  2. প্রজ্ঞানতত্ত্ব: এই দর্শনে বিশ্লেষণ হয় জ্ঞানের সূত্র, উৎপত্তি, স্বীকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে।
  3. নীতিতত্ত্ব: এই দর্শনে বিশ্লেষণ হয় নীতি, মর্যাদা, সত্য, শ্রেষ্ঠতা, ভাল আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে।
  4. লক্ষণাতিতত্ত্ব: এই দর্শনে বিশ্লেষণ হয় তার্কিক শক্তি, প্রমাণ, ন্যায় বিচারের নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে।
  5. আস্তিক দর্শন: এই দর্শনে বিশ্লেষণ হয় একটি ঈশ্বরের উপর ভিত্তি করে। উদাহরণ হিসেবে বেদান্ত, ন্যায়, সাংখ্য, যোগ, মীমাংসা, বৌদ্ধ, জৈন দর্শন ইত্যাদি।
  6. নাস্তিক দর্শন: এই দর্শনে বিশ্লেষণ হয় একটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে। উদাহরণ হিসেবে চার্বাক, জানিয়, লোকায়ত, অজীবক ইত্যাদি।

এই সব প্রকারের দর্শন বা দার্শনিক চিন্তা মানব বিচারের বিভিন্ন দিক নির্দেশ করে এবং জীবন, সমাজ, বিজ্ঞান, শিক্ষা, রাজনীতি, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদির প্রশ্নগুলির উদ্দেশ্যে বিচার করা হয়।

দর্শনের জনক কে

দর্শনের জনক বা প্রথম দার্শনিক হিসেবে বিশ্বাস করা হয় প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক থাকেলেস (Thales)। থাকেলেস প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ছিলেন সে মিলাসিয়ার মাইলিটাস নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। থাকেলেস প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক থাকেলেস প্রাথমিক উপাদান বা মৌলিক উপাদান হিসেবে জল (পানি) বিশ্বাস করতেন। এটি দার্শনিক চিন্তার একটি আদান-প্রদান ছিল যে প্রাকৃতিক উপাদানের অন্তর্ভূক্তি দ্বারা পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে।

দর্শন শাস্ত্র কী-দর্শন নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়
দর্শন শাস্ত্র কী-দর্শন নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়

এছাড়া, অন্যান্য গ্রিক দার্শনিক প্রথম বিশ্বাস করতেন পরমাণু, আপটিমোস, আরখে, প্রতিবিম্ব ইত্যাদি প্রাথমিক উপাদান হিসেবে। এই দার্শনিকদের চিন্তা ও পর্যালোচনা নীতি, ধর্ম, সমাজ, বিজ্ঞান ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে একটি শক্তি বানিয়ে তোলে। তারা প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক বা মাইলিটিক দার্শনিক হিসেবে পরিচিত।

দর্শনের বৈশিষ্ট্য

দর্শন বা দার্শনিক চিন্তা মানব চিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটির বেশিরভাগ প্রকার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। এটির কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  1. বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি: দর্শন বিশ্বের স্বরূপ, জ্ঞান, নীতি, ধর্ম, মূলতত্ত্ব, জীবনের উদ্দেশ্য, মানুষের জীবনের সার্থকতা ইত্যাদি সম্পর্কে চিন্তা করে।
  2. প্রশাসনশীলতা: দর্শন মানুষের বুদ্ধির প্রশাসন করার উপায় নির্ধারণ করে এবং জীবনের নীতি এবং মর্যাদা নির্ধারণ করে।
  3. তত্ত্ববিদ্যা: দর্শন বিশ্বের মৌলিক তত্ত্ব নির্ধারণ করার চেষ্টা করে। এটি মূলতত্ত্বের, জ্ঞানের এবং বিশ্বাসের বিকাশে সাহায্য করে।
  4. তার্কিক বিশ্লেষণ: দর্শন তার্কিক বিশ্লেষণ এবং তার্কিক তত্ত্ব ব্যবহার করে চিন্তা করে এবং এটি তার্কিক ভাবে বিচার করার প্রক্রিয়ায় মানুষের বুদ্ধি উন্নত করার চেষ্টা করে।
  5. মরাল ও নৈতিক মূল্যবোধ: দর্শন মানুষকে নৈতিক এবং মরাল মূল্যবোধ করার জন্য প্রেরণা দেয়।
  6. ব্যাক্তিগত ও সামাজিক বিকাশ: দর্শন মানুষের ব্যাক্তিগত এবং সামাজিক বিকাশের দিকে নির্দেশনা দেয়। এটি মানব সমাজ এবং পরিস্থিতির প্রতি প্রভাব ফেলে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি সমগ্র ভাবে দেখা যায় দর্শনের গুরুত্ব এবং এটি মানব বিচারের বিভিন্ন দিক নির্দেশ করে। এটি মানব জীবনের নৈতিকতা, মরালিতি, সমাজ এবং ব্যক্তিগত বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলে।

দর্শনের আলোচ্য বিষয় কি

দর্শনের আলোচ্য বিষয়গুলি অত্যন্ত ব্যাপক এবং বিস্তৃত হতে পারে, কারণ দর্শন মানব চিন্তার একটি বিশাল দিকস্থান নিয়ে চিন্তা করে। এই বিষয়গুলি মধ্যে কিছু প্রধান অংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  1. জীবনের মূল উদ্দেশ্য: দর্শন জীবনের মূল উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে পারে, যেমন কি মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য, সুখ বা নৈতিকতা ইত্যাদি।
  2. সত্য এবং বৈশিষ্ট্য: দর্শনে সত্যের প্রকাশ এবং সত্যের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়, এবং কেমন সত্যের প্রকার বা প্রকার সম্পর্কে চিন্তা করা হয়।
  3. আত্মা এবং প্রকৃতি: দর্শনে আত্মা এবং প্রকৃতির সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়। এটি জীবন, মৃত্যু, আত্মবিশ্বাস, চেতনা, ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত।
  4. নৈতিকতা এবং নীতি: দর্শনে নৈতিক মূল্য এবং নীতি নির্ধারণ করা হয়, এবং কীভাবে এই মূল্য ও নীতি মানব জীবনে প্রভাব ফেলে সেটি নিয়ে বিচার করা হয়।
  5. জ্ঞান এবং বিজ্ঞান: দর্শনে জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের স্বরূপ, সীমা, এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
  6. ধর্ম এবং পরিপূর্ণতা: দর্শন ধর্মের প্রকাশ এবং মানুষের জীবনে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে পারে, যেমন পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম বা ধর্ম নিয়ে আলোচনা।

এই বিষয়গুলি দর্শনের বেশিরভাগ চিন্তা নির্দেশ করে এবং এটি মানব বিচারের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করে।

দর্শন নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়

দর্শন পড়লে মানুষ নিজের চিন্তা, মন্তব্য, আদর্শ, নীতি, এবং মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারে। দর্শনের পাঠ্যবই পড়লে নিম্নলিখিত প্রভাব ফেলতে পারে:

  1. বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি: দর্শন পড়লে মানুষের বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পায় এবং সুধার হয়। তার ভাবনা পরিপর্যন্ত বিকস্ত হয়।
  2. আদর্শ ও মৌল্য নির্ধারণ: দর্শন পড়লে মানুষ নিজের আদর্শ এবং মৌল্য নির্ধারণ করতে পারে এবং তা প্রতিরূপ দেয় তার জীবনে।
  3. দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ এবং চিন্তা সমৃদ্ধি: দর্শন পড়লে মানুষ আলোচনা করার ক্ষমতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারে এবং তার চিন্তাগুলি সমৃদ্ধ হয়।
  4. জীবন দরকারি দিক: দর্শন পড়লে মানুষ তার জীবনের দরকারি দিক নির্ধারণ করতে পারে এবং নিজের জীবনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে।
  5. সমাজে পরিণতি: দর্শন পড়লে মানুষ সমাজের পরিণতি এবং সমাজ প্রতি যথার্থ দৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করতে পারে।
  6. পরিবর্তন এবং বিকাশ: দর্শন পড়লে মানুষ নিজের ভাবনা, ধারণা এবং পরিধি পরিবর্তন করতে পারে এবং নতুন ও বৃদ্ধি হয় তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে।

দর্শন পড়ার মাধ্যমে মানুষ তার বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করে এবং তার চিন্তা, আদর্শ, মর্যাদা, এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

Tags: